রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন
রাবি প্রতিনিধি : আকতার জাহান ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পরে তিনি শিক্ষক হিসেবে চাকুরিতে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। যোগদানের পূর্বেই তানভীর আহমেদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, যিনি বর্তমানে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। কয়েক বছর আগে তাদের বিয়ে ছাড়াছাড়ি হয়। তানভীর আহমেদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলে ২০১২ সালে ছেলে সোয়াদকে নিয়ে জুবেরী ভবনে উঠেন আকতার জাহান। ২০১৬’র শুরুতে ছেলে সোয়াদ ঢাকায় তার নানার বাড়িতে চলে গেলে জুবেরী ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষে একা থাকতেন তিনি। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ শুক্রবার বিকেলে জুবেরী ভবনের নিজ কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার মুখে লালা ও কালো দাগ দেখা যায়। পরে তার লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। মর্গের সামনে ভিড় করছেন তার সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীরা। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং একে অপরকে জড়িয়ে কাঁদছেন। এদিকে জুবেরী ভবনে তার নিজ কক্ষের টেবিলে ল্যাপটপের নিচে ১টি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক ও মানসিক অনেক কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করলাম। মৃত্যুর পরে আমার সন্তান সোয়াদকে তার বাবার কাছে যেন না পাঠানো হয়। বাবা তার সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে। আর আমার লাশ ঢাকায় না নিয়ে যেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেওয়া হয়।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, গত দুই দিন ধরে আকতার জাহানের ছেলে সোয়াদ তাকে ফোনে পাচ্ছিলেন না। পরে সোয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা এবং তাদের সাবেক প্রতিবেশী অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপুকে জানান। গোলাম সাব্বির সাত্তার তখন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষককে তা জানালে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আজাদ খান এবং পুলিশ প্রশাসনের সাথে তার নিজ কক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের ৩০৩ নং কক্ষের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে অবশেষে দরজা ভেঙে তারা কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা মশারি টানানো অবস্থায় আকতার জাহানকে বিছানায় অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক মশিহুর রহমান বলেন, ‘তার কক্ষ ভেঙ্গে প্রবেশ করে তার মুখের চারপাশে পোড়ামত একধরনের পদার্থ দেখতে পাই। সম্ভবত ফেনা জাতীয় পদার্থ। তবে সেটা আসলে কি তা ময়না তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়।’ সহকর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তিনি ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। বেশ কিছু ডিপ্রেশন ছিলো। আর সম্প্রতি তার ছেলেকেও তিনি রাজশাহী থেকে ঢাকাতে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেটার কারণেও মনে এক ধরনের কষ্ট কাজ করতো। তবে তিনি এসব কষ্ট খুব কমই শেয়ার করতেন।
আকতার জাহানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান। শিক্ষামন্ত্রী জনাব নূরুল ইসলাম নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে কথা বলে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।