শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন
জ্ঞানতাপস মযহারুল ইসলামের সাহিত্যচর্চায় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর মানস চেতনার প্রতিফলন
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবী উত্থাপনের পর দেশে যে ব্যাপক গণ-আন্দোলন শুরু হয় সে গণ-আন্দোলনের সঙ্গে মযহারুল ইসলাম একাত্ম হন। ৬ দফা আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেয় স্বাধীনতা আন্দোলনে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজপথে নেমে মযহারুল ইসলাম ৬ দফা এবং স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু যখন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তখন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন মযহারুল ইসলাম। রাত ১০টার দিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে করণীয় বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর সুনির্দিষ্ট নির্দেশ নিয়ে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ৩২ নম্বর বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। ঐ রাতেই অর্থাৎ ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশে শুরু হয় ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ। কালজয়ী এই মুক্তিযুদ্ধে মযহারুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন প্রত্যক্ষভাবে। এপ্রিল এবং মে মাসে দেশের অভ্যন্তরে পাবনা এবং সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সংগঠিত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। কিন্তু জুন মাসের মাঝামাঝিতে এলাকাগুলো যখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, দেশের অভ্যন্তরে তাঁর অবস্থান অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। ফলে আত্মরক্ষার জন্য ১৯৭১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে শাহজাদপুর থেকে পায়ে হেঁটে তিনি গোপনে ভারতের পথে যাত্রা করেন। বহু কষ্টে তিনি পায়ে হেঁটে বাঘা লালপুর হয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরনে একটা লুংগী, গামছা আর গেঞ্জি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতের জলংগী সীমান্তে প্রবেশ করেন, যুক্ত হন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। প্রতিদিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সাহসী ও বলিষ্ঠ বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। স্ত্রী এবং সন্তানরা ছিলেন বাংলাদেশেই। নিজের পরিবারের সুখ-শান্তির চেয়ে দেশের স্বাধীনতাকে তিনি বড় করে দেখেছিলেন। প্রফেসর মযহারুল ইসলাম একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কলমে, কণ্ঠে এবং অস্ত্র হাতে। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হবার পর কালবিলম্ব না করে ১৯ ডিসেম্বর ভারতীয় সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়, প্রফেসর মযহারুল ইসলাম সহ বিশিষ্ট মুক্তিসংগ্রামীদের।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তারিখে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। কাজেই বাংলা ভাষার উন্নয়ন ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়, এ জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী গবেষণা ও সংরক্ষণ কেন্দ্র অর্থাৎ বাংলা একাডেমি। সেই লক্ষ্যে নব আঙ্গিকে বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেন বাংলা একাডেমি এবং প্রথম মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেন জ্ঞানতাপস ড. মযহারুল ইসলামকে। তিনি ২২ মার্চ ১৯৭২ থেকে ১৮ আগস্ট ১৯৭৪ অবধি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। নবগঠিত বাংলা একাডেমি পরিচালনায় ড. মযহারুল ইসলাম অসাধারণ সাফল্যের পরিচয় দেন। প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলা একাডেমি দ্রুত বাংলাদেশের প্রধান গবেষণা, সংরক্ষণ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেখা দেয় নানা জটিলতা। সেই সব জটিলতা নিরসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর আস্থাভাজন ড. মযহারুল ইসলামকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন। ১৯৭৪ সালের ১৯ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগদান করেন প্রফেসার ড. মযহারুল ইসলাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর মাত্র এক মাসের মাথায় ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামকে উপাচার্য পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বিবেচনায় রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘ তিন বছর তাঁকে কারারুদ্ধ রাখা হয়। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে এসে তিনি তাঁর স্থায়ী পদ অর্থাৎ বাংলা বিভাগের প্রফেসর পদে যোগদানপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে বাংলা বিভাগে তাঁর নিজ পদে যোগদান করতে বাধা দেন তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহম্মদ আবদুল বারী। স্বাধীন দেশে পরাধীন একজন মুক্তিসংগ্রামী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে বাধ্য হন ভারতীয় ইউজিসির আমন্ত্রণে ভারতে চলে যেতে। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রাঁচী বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ছয় বছর শিক্ষকতা করেন। সেখানেও তিনি নিজ দক্ষতা ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
দীর্ঘ প্রবাস জীবনের শেষে দেশে ফিরেই আবার মনোনিবেশ করেন নিজ গবেষণা এবং সাহিত্য রচনায়। করতোয়া নদীর তীরে চরনবীপুর গ্রাম। যেখানে জন্মেছিলেন এই জ্ঞানতাপস সেই অঞ্চলের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিবিড়। লোকায়ত জীবন ও শ্যামল নিসর্গের গভীর স্পর্শ শৈশবেই তাঁকে করেছে চঞ্চল। শৈশব থেকেই নদী, বর্ষা, বৃষ্টি এবং প্রকৃতির নানা লীলার সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপিত। মাটির সোঁদা গন্ধে তিনি হয়েছেন বিভোর। চারপাশের প্রকৃতি চমৎকারভাবে স্থান করে নিয়েছে তাঁর সাহিত্যে। কৈশোরে বিকেল হলেই নদীর ঘাটে অবস্থানরত বিশাল বিশাল নৌকার ছইয়ের উপর বসে সময় কাটাতেন মযহারুল ইসলাম। নিবিষ্ট চিত্তে নদীর ছন্দময় চলন, বায়ুর মৃদুমন্দ ধ্বনি ব্যাকুল করতো তাঁকে। সেই প্রেরণাতে লিখেছেন কবিতা। মযহারুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা দশের অধিক। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ কাব্য বিচিত্রা, সন্তরণে নিরন্তর, উজানে ফেরার প্রতিধ্বনি, আর্তনাদে বিবর্ণ, মাটির ফসল, বিচ্ছিন্ন প্রতিলিপি, যেখানে বাঘের থাবা, অপরাহ্নে বিবস্ত্র প্রাতরাশ, দুঃসময়ের ছড়া, সাম্প্রতিক ছড়া, রাজবারান্দায় তুমি প্রভৃতি।
ড. মযহারুল ইসলাম সমস্ত জীবন ধরে সাহিত্য সাধনা করে গেছেন। তাঁর সাহিত্যের পটভূমিতে প্রাধান্য পেয়েছে মুক্ত-স্বাধীন দেশের চেতনা আর প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ। লোকসাহিত্য-সংস্কৃতি গবেষণায় তাঁর অবদান অনন্য। তাঁর রচিত প্রবন্ধ ও গবেষণা গ্রন্থের সংখ্যা পঁচিশের অধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা, কিশোর নবীনদের বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন ও শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য, রবীন্দ্রনাথ: কবি, সাহিত্যশিল্পী এবং কর্মযোগী, কবি পাগলা কানাই, সাহিত্য পথে, লোকলোর পরিচিতি ও লোক সাহিত্যের পঠন-পাঠন, ফোকলোর পরিচিতি ও পঠন-পাঠন, লোককাহিনী সংগ্রহের ইতিহাস, সতীময়না ও লোর-চন্দ্রানী (সম্পাদিত), ফোকলোর চর্চায় রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি, বিচিত্র দৃষ্টিতে ফোকলোর, আঙ্গিকতার আলোকে ফোকলোর, অসীম রোদন দুলিছে যেন, বাঙালি জীবনে ত্রয়ী ও অন্যান্য চিন্তা, রবীন্দ্রনাথ নজরুল ও বাঙালি সংস্কৃতি, সমকালীন রাজনীতি, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের দ্বন্দ্ব-সংঘাত। অনুবাদ গ্রন্থ- বাংলাদেশ লাঞ্ছিতা, ছোটগল্প- তালতমাল, উপন্যাস- এতটুকু ছোঁয়া লাগে।
তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন দেশকে শিল্প-সাহিত্য চর্চায় উন্নত করতে হলে পত্র-পত্রিকার বিকল্প নেই। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমেই নতুন নতুন প্রতিভার জন্ম হবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি যখনই সুযোগ পেয়েছেন, পত্র-পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তখন তিনি সম্পাদনা করেন ফজলুল হক হল বার্ষিকী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অবস্থায় গবেষণাধর্মী ‘সাহিত্যিকী’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং সৃজনশীল লেখনী নির্ভর ‘উত্তর অন্বেষা’ নামের একটি পত্রিকা। জীবনের অন্তিম প্রহরে তিনি গবেষণাধর্মী অতি উচ্চমানসম্পন্ন ‘ফোকলোর’ পত্রিকা এবং মাসিক ‘মেঘবাহন’ নামে দুটি সৃজনশীল সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন, নানা কারণে পত্রিকা দু’টি বিশিষ্টতার দাবিদার। সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ড. মযহারুল ইসলামের অবদান স্মরণযোগ্য। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ফোকলোর সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। জাতীয় কবিতা পরিষদ, জাতীয় চার নেতাপরিষদে আজীবন তিনি অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৬৮ সালে তাঁকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৭০ সালে তাঁকে তৎকালীন পাকিস্তানের উচ্চতম সাহিত্য পুরস্কার ‘দাউদ পুরস্কার’ প্রদান করা হয়।
শিল্প-সাহিত্যের জগৎ ছাড়াও শিক্ষা, জনসেবা এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি নানা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তাঁর নিজ এলাকা শাহজাদপুরে ব্যক্তিগত অর্থে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। নিজ এলাকায় মযহারুল ইসলাম অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে শেষ করেছেন শিল্পপতি হিসেবে। শিল্পপতি হলেও তাঁর জীবনে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে কোনরকম ভাটা পড়েনি। চিড় ধরেনি চেতনায়। প্রতিনিয়ত মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজের কর্তব্য-কর্ম করে গেছেন আজীবন।
দেশবরেণ্য এই মহান কবি, শিক্ষাবিদ, পন্ডিত, গবেষক আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফোকলোর বিশারদ, সংস্কৃতিকর্মী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রফেসর মযহারুল ইসলাম ২০০৩ সালের ১৫ নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে সমাহিত করা হয় শাহজাদপুরে। প্রফেসর মযহারুল ইসলাম ভালবেসেছিলেন দেশকে, দেশের মানুষকে। জীবনের শেষ অবধি তিনি বাঙালি ঐতিহ্যধারা সমৃদ্ধকরণে সচেষ্ট ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক ফোকলোর চর্চায় প্রফেসর মযহারুল ইসলাম ছিলেন অগ্রগামী। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দেশ বিরোধীচক্রের বৈরিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে এই জ্ঞানতাপসকে। সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে তিনি ব্রত ছিলেন দেশমাতৃকার সেবায়। অসংখ্য অর্জনের মধ্যে তাঁর শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি মানুষের অকুণ্ঠ ভালবাসা। এখানেই তাঁর জীবনের বড় সাফল্য।
লেখক: আল্ জাবির, সহকারি অধ্যাপক, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ